গার্ড রেল ষ্টীল বা কনক্রিট হতে পারে।

 স্রেফ ধরে ধরে হাওয়া খাওয়ার জন্য সড়ক সেতুতে গার্ড রেলিং দেয়া হয় না। তাই সেখানকার নাট-বল্টু গুলার সুনির্দিস্ট টেকনিক্যাল কাজ আছে।

গার্ড রেল ষ্টীল বা কনক্রিট হতে পারে। বাংলাদেশের জাপান নির্মিত মেঘনা, গোমতী, কাঁচপুর সহ বহু সেতুতে ষ্টীল নির্মিত গার্ড রেল আছে। চীনের নির্মিত পদ্মা সেতুতে কনক্রিট গার্ড রেলের উপর ষ্টীল/এলুমুনিয়ামের কানেক্টিং বার দেয়া হয়েছে।
আন্তঃস্প্যান ভাইব্রেশান কমানো গার্ড রেলিং এর মূল কাজ না হলেও এটাও একটা পরোক্ষ কারন। তবে ভাইব্রেশান কমানো সহ অপরারপর মেকানিক্যাল সাপোর্টের জন্য স্প্যানের নিচে অতি উচ্চ ক্ষমতার সাস্পেনশন বিয়ারিং আছে। সেতুর রেলিং দিয়ে মানুষ ও যানবাহন সেতু থেকে পড়ে যাওয়া রোধ করতে পারে। মোটর চালকরা যখন একটি সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চালায়, তখন গার্ডেলগুলি চালকদের সতর্ক করে এবং গতি ও লেইন নিয়ন্ত্রণ নিরাপদ করে। লেইনের ভিতরে ট্রাফিক ধারণ করার পাশাপাশি, এই রেলিংগুলি সেতুর নান্দনিকতাও বাড়িয়ে তোলে।
আধুনিক সময়ে রেলিংয়ের সক্ষমতা ঠিক আছে কিনা সেটা যাচাইয়ের জন্য ক্র্যাশ পরীক্ষাও করা হয়। কয়েক দশক আগের তুলনায় আজকের সেতু গুলোতে রেলগুলি অনেক বেশি ভারী হয়। রেলিং নির্দিষ্ট সময় পরপর মেরামতেরও প্রয়োজন হয়।
রেলিং এর নাটের বোল্ট গুলোকে অবশ্যই ক্ষেত্র বিশেষে ১০০, ১২০ থেকে কোথাও কোথাও ২০০ ফুট-পাউন্ড (প্রায়) টর্ক বা মোচড় দিয়ে শক্তভাবে টাইট দিতে হয়। এটা হাতে রেঞ্চ দিয়ে নয় বরং মেশিন দিয়ে টাইট করার কথা। এই পরিমাণ টর্ক প্রয়োগ করে থাকলে কোন যন্ত্র ছাড়া খালি হাতে নাট খোলা সম্ভব না। এই নাট বোল্ট গুলা বিশেষ ষ্টীল দিয়ে তৈরি হবার কথা।
পদ্মা সেতুর গার্ড রেল মূলত কনক্রিটের, এখানে রেলিং এর নাট-বোলট গুলো বেশ ছোট। স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বোল্ট গুলো লুজ করে লাগানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর গার্ড রেলিং এর নাটের বোল্ট গুলো কভার্ড বোল্টও নয়। কোনরকম দায়সারা ভাবে লাগানোয় প্রয়োজনীয় টর্কে এগুলা শক্তভাবে টাইট দেয়া হয়নি। আর টিভির প্রতিবেদনে (লিংকে) বায়েজিদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ আবারও অপেশাদার পথে বোল্ট টাইট দেয়ার (হাতে) উদ্যোগ নিয়েছে। বোল্ট কভারের পরিবর্তে গ্লু দিতে দেখা গেছে। টিকটক বায়েজিদ একটা ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যাতে উনাকে হয়রানি না করে ছেড়ে দেয় এবং উনাকে হয়রানির ক্ষতিপূরণ দেয়।
জাপান নির্মিত পুরানো মেঘনা/গোমতী সেতু দ্বয়ের ষ্টীল রেলিং এর নাট-বোল্ট বেশ ভারী ছিল, একটা নাট-বোল্টের ওজন প্রায় ৮ কেজির উপরে। অনেক দিন আগের সংবাদ প্রতিবেদনে দেখেছি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে এসব নাট-বোল্ট খুলে, গার্ড রেলিং এর ষ্টীল বার চুরি করা হয়েছে। অর্থাৎ সেতুগুলোতে সরকার ৩০ বছর ধরে টোল নেয়া অব্যহত রাখলেও এগুলোর নিরাপত্তার কোন নূন্যতম আয়োজন করেনি।
বায়েজিদকে হয়রানি না করে, সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়সারা ও দুর্নীতিমনা চর্চা থেকে সরে এসে সেতু বিভাগ কিভাবে সেতুগুলোর মানসম্পন্ন রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করবে তার সুনির্দিস্ট একশন পয়েন্ট চাই। নাট-বল্টু তো দুরের কথা, মেঘনা সেতুর ঠিক পিলার/পাইলের পাশেই ড্রেজিং করে বালু উঠিয়ে বিক্রি করায় সেতুটির পিলারের নিচে স্কোয়ারিং হয়েছে অর্থাৎ পিলারের নিচের মাটিই ক্ষয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়ে এসব ঠিক করতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে হয়েছে, তাও দুটি প্রকল্প নেয়া লেগেছে। বিলিভ মি, গালগল্প নয়। পোস্তগোলায়/বাবুবাজার ব্রিজে রেলিং এর পাত, নাট-বল্টুও চুরি গেছে। এমনকি দুটি স্প্যানের মধ্যে এমন ফাঁক হয়েছে যে কম বয়সীরা ত বটেই বয়স্করাও হাঁটার সময় 'টুস' করে পড়ে যাবার ভয়ে থাকে।
সেতু সংরক্ষনের এমন হীনম্মন্যতা থেকে বাংলাদেশ সরবে কবে?

Comments

Popular posts from this blog

চোখেরজল -------সরওয়ার স্যার

অবিভাবক ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ না হওয়ার ব্যাপারে কতিপয় হাদীস:

আজ ফরেক্স ওয়েবিনার XM এর সৌজন্যে